সংবাদ আপডেট

দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন করে প্রবীণ গান্ধীবাদী আন্না হাজারে যখন সারা দেশে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন, সেই সময় ২০১১ সালে, যে কজন প্রতিদিন তাঁকে ঘিরে থাকতেন, অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছিলেন তাঁদের একজন। সেদিন কেউ ভাবেনি, ৪৩ বছরের সাদামাটা ওই মানুষটি একদিন ভারতীয় রাজনীতির উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে উঠবেন। দুর্নীতি রোধে জন লোকপাল বিল পাস করানোর দাবি কেন্দ্রীয় সরকার মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। যদিও কেজরিওয়াল বাধ্য শিষ্যের মতো আন্না হাজারের কথা মেনে রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে রাজি হননি। গুরু-শিষ্যের মতানৈক্যের সেই শুরু। পরের বছর ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে জন্ম নেয় তাঁর নতুন দল।

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কেজরিওয়ালের হ্যাটট্রিক ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। পাঁচ বছর রাজত্বের পরেও তৃতীয় দফার নির্বাচন ঠিক যেন দ্বিতীয় দফার জলছবি! কংগ্রেস এবারও আসনহীন। আগেরবারের তুলনায় মাত্র ৫ আসন কম পেল আপ। সংগ্রহে ৬২। বাকি ৮ বিজেপির। তত দিনে প্রতিষ্ঠিত উন্নয়নের ‘দিল্লি মডেল’।

নিজের সিদ্ধান্তের সপক্ষে আন্না হাজারেকে কেজরিওয়াল বলেছিলেন, দুর্নীতি এখন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। সমাজব্যবস্থা বা ‘সিস্টেম’–এর অঙ্গ। তা ভাঙতে হলে সিস্টেমের ভেতরে ঢুকতে হবে। বাইরে থেকে লাভ নেই।

দলের নাম ও প্রতীকও অনেক ভেবেচিন্তে ঠিক করা। আম আদমি পার্টি (আপ) এবং ঝাড়ু। বলেছিলেন, সমাজ গড়তে হলে দুর্নীতি দূর করতে হবে ঝেঁটিয়ে। ঝাড়ুই হাতিয়ার। এই ঝাড়ু সবাইকে সরিয়ে আপকে দিল্লিতে ক্ষমতাসীন করার ৯ বছরের মাথায় ২০২২ সালে পাঞ্জাবও জয় করল।

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

সিস্টেমের অঙ্গ পরের বছরেই

রাজনীতিতে কেজরিওয়ালের মতো ক্ষণজন্মা কজন আছেন, গবেষণার বিষয়। রাজনৈতিক দলের জন্ম দেওয়ার এক বছর কাটতে না কাটতেই মুখ্যমন্ত্রী! দিল্লি বিধানসভার ভোট হলো ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর। ৭০ আসনের মধ্যে ৬৯টিতে লড়ে ‘আপ’ পেল বিপুল সমর্থন। ৪০ শতাংশ ভোট, ২৮টি আসন! সাড়ে ৪ শতাংশ ভোট বেশি পেয়ে বিজেপি পেল ৩১ আসন, সাড়ে ১১ শতাংশ ভোট পেয়ে কংগ্রেস ৮টি। বিজেপিকে রুখতে আপকে সরকার গড়তে বাইরে থেকে সমর্থন দিল কংগ্রেস।

সেটাও হয়েছিল অভিনবভাবে। বিজেপি সরকার গড়তে অসম্মত হওয়ায় উপরাজ্যপাল নাজিব জং আমন্ত্রণ জানান কেজরিওয়ালকে। বিজেপি ও কংগ্রেসকে চিঠি লিখে কেজরিওয়াল ১৮টি বিষয়ে তাদের দলগত অবস্থান জানতে চান। বিজেপি উত্তর না দিলেও কংগ্রেস ১৬টি বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করে। কেজরিওয়াল জনতার মতামত নেন সরকার গঠনের ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে কি না জানতে। তারপর উপরাজ্যপালকে চিঠি দিয়ে জানান, কংগ্রেস বাইরে থেকে সরকারকে সমর্থন দিতে প্রস্তুত। ২৮ ডিসেম্বর শপথ নেন কেজরিওয়াল। কিন্তু প্রতিশ্রুতিমতো লোকায়ুক্ত (কেন্দ্রীয় স্তরে লোকপাল, রাজ্যস্তরে লোয়ায়ুক্ত) নিয়োগ বিল পেশ করতে বাধা পেয়ে ৪৯ দিন পর পদত্যাগ করেন। দিল্লিতে জারি হয় রাষ্ট্রপতির শাসন।

দিল্লির রামলীলা ময়দানের মঞ্চে আন্নার পাশে-পেছনে নিত্য উপস্থিতি তাঁর। রাজনীতির সুপ্ত বাসনার জন্মও তখন। আন্না হাজারের তীব্র আপত্তিতে হতোদ্যম হননি। হননি বলেই আজ তিনি রাজনীতির আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র।

নতুন নির্বাচন হলো ২০১৫ সালের গোড়ায়। তত দিনে নরেন্দ্র মোদির রাজত্ব শুরু হয়ে গেছে। বিজেপি আরও উজ্জীবিত। কিন্তু সবাইকে চমকিত করে আপ জিতল ৬৭ আসন! বাকি ৩টি বিজেপির। সেই প্রথম কংগ্রেসকে ফিরতে হলো খালি হাতে। সেই কংগ্রেস, কিছু বছর আগেও শীলা দীক্ষিত যে দলকে দিল্লিতে প্রায় অজেয় করে তুলেছিলেন!

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কেজরিওয়ালের হ্যাটট্রিক ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। পাঁচ বছর রাজত্বের পরেও তৃতীয় দফার নির্বাচন ঠিক যেন দ্বিতীয় দফার জলছবি! কংগ্রেস এবারও আসনহীন। আগেরবারের তুলনায় মাত্র ৫ আসন কম পেল আপ। সংগ্রহে ৬২। বাকি ৮ বিজেপির। তত দিনে প্রতিষ্ঠিত উন্নয়নের ‘দিল্লি মডেল’।

গোকুলে বেড়ে ওঠা কেজরিওয়াল ও আগামীর রাজনীতি

আমলা, আন্দোলন, রাজনীতি

উত্তর ভারতের জাতপাত–সর্বস্ব রাজনীতির নিরিখে কেজরিওয়ালরা ‘বানিয়া’ বা বেনে, মানে ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ী। হরিয়ানার ভিওয়ানি জেলায় তাঁর জন্ম ১৯৬৮ সালের ১৬ আগস্ট। কিন্তু বেনে হলেও তাঁর বাবা ছিলেন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। ছেলেরও বাবার পথেই হাঁটা। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন খড়্গপুর আইআইটি থেকে। চাকরিজীবনের প্রথম কবছর বিহারের জামশেদপুরে টাটা স্টিলে। তারপর সিভিল সার্ভিসেসে উত্তীর্ণ হয়ে আয়কর বিভাগে। ২০০৬ সালে দিল্লি আয়কর বিভাগের যুগ্ম কমিশনার পদে থাকাকালে কেজরিওয়াল চাকরি ছাড়েন। তত দিনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং তথ্য জানার অধিকারের আন্দোলনে শামিল তিনি। আজ যিনি দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী, সেই মনীশ সিসোদিয়া তাঁর সহযোদ্ধা। সামাজিক আন্দোলনের স্বীকৃতি মেলে ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়ে। চাকরি ছাড়ার পর পুরস্কারের অর্থ দিয়ে গড়ে তোলেন বেসরকারি সংগঠন ‘পাবলিক কজ রিসার্চ ফাউন্ডেশন’, জনতার সুখ-দুঃখে ২৪ ঘণ্টা পথচলা সেই শুরু তাঁর।

দুর্নীতির ভূত কেজরিওয়ালকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে প্রথম থেকেই। ২০১০ সালে দিল্লি যখন কমনওয়েলথ গেমস নিয়ে গমগম করছে, কেজরিওয়াল তখন সরব গেমস-দুর্নীতি নিয়ে। দুর্নীতি রোধে কেন্দ্রে লোকপাল ও রাজ্যে রাজ্যে লোকায়ুক্ত নিয়োগের দাবি জোরালো হচ্ছে। আন্না হাজারের ‘ইন্ডিয়া এগেইনস্ট করাপশন’ আন্দোলনও দিল্লিমুখী। শামিল কেজরিওয়াল। দিল্লির রামলীলা ময়দানের মঞ্চে আন্নার পাশে-পেছনে নিত্য উপস্থিতি তাঁর। রাজনীতির সুপ্ত বাসনার জন্মও তখন। আন্না হাজারের তীব্র আপত্তিতে হতোদ্যম হননি। হননি বলেই আজ তিনি রাজনীতির আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র।

দিল্লি মডেল: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সরকারি পরিষেবা

দেশ বা রাজ্য শাসনে নরেন্দ্র মোদির ‘গুজরাট মডেল’–এর পাল্টা কেজরিওয়ালের ‘দিল্লি মডেল’। এই মডেলকে শোকেস করেই আপ-এর জয়জয়কার আজ পাঞ্জাবে। মডেল নিয়ে শুধু ভারত নয়, বিশ্ববাসী আগ্রহী হয়েছে বহু আগে। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৮ সালে দিল্লি মডেল জানতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়াকে। তাঁর ব্যাখ্যা ছিল এ রকম, ভারতে অনেক আইআইটি, আইআইএম, এইমস তৈরি হয়েছে। তারা উচ্চ মেধার পেশাজীবী তৈরি করেছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান বড়জোর ৫ শতাংশ মানুষের জন্য। বাকি ৯৫ শতাংশের কথা ‘সিস্টেম’ কখনো ভাবেনি। তারা যেন ‘কাব্যে উপেক্ষিতা ঊর্মিলা’! এই অবস্থা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দুয়েতেই। এভাবে গাছের গোড়া উপেক্ষা করে আগার পরিচর্চায় লাভ হয় না। কারণ, দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি নির্ভর করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের সর্বজনীন অধিকার এবং তার গুণগত মানের ওপর। দিল্লি মডেল সেই বৈষম্য দূর করছে।

কী করেছে দিল্লি সরকার? সরকারি স্কুলের ভোল বদলে দিয়েছে। প্রথম নজর অবকাঠামো তৈরিতে। ঝকঝকে স্কুল বিল্ডিং, পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক শৌচালয়, নতুন আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে স্কুল। তৈরি হয়েছে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত অ্যাসেম্বলি হল। কোথাও বা সুইমিং পুল, জিমনেসিয়াম, অ্যাথলেটিক ট্র্যাক। হার্ভার্ডে সিসোদিয়া বলেছিলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ৮ হাজার নতুন ক্লাসরুম তৈরি করেছি। আরও ১০ হাজার তৈরি হচ্ছে।’ আজ চার বছর পর দিল্লির সরকারি স্কুলে যাওয়ার নাগরিক অনাগ্রহ দূর হয়েছে। বেসরকারি স্কুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সরকারি স্কুলের শিক্ষকের মান উন্নত হয়েছে। শিক্ষকের যোগ্যতা নির্ধারণ ও পদোন্নতিতে গুরুত্ব পাচ্ছে পড়ুয়াদের অভিমত। গুরুত্ব পাচ্ছেন অভিভাবকেরাও। দূর হয়েছে সরকারি স্কুলের পড়ুয়া ও শিক্ষকদের হীনম্মন্যতা।

শিক্ষার মতোই নজর পড়েছে স্বাস্থ্যব্যবস্থায়। চালু হয়েছে ত্রিস্তর স্বাস্থ্য পরিষেবা। এত দিন ধরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যের দেখভাল করত প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এক একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরিতে খরচ অন্তত ৫ কোটি টাকা। গুরুতর রোগীদের সেখান থেকে পাঠানো হতো হাসপাতালে। আপ সরকার এলাকায় এলাকায় তৈরি করে ‘মহল্লা ক্লিনিক’। খরচ ক্লিনিকপ্রতি মাত্র ২০ লাখ টাকা! প্রতিটি ক্লিনিকই অস্থায়ী, কিন্তু শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। সেখানে সর্দি, কাশি, জ্বর, ব্যথা, বেদনা, হাত-পা ভাঙা–জাতীয় সাধারণ চিকিৎসার পাশাপাশি রক্ত, থুতু বা মলমূত্র পরীক্ষার মতো ব্যবস্থা রয়েছে। গুরুতর কিছু হলে সেখান থেকে রোগীদের পাঠানো হয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। আরও গুরুতরদের হাসপাতালে। খরচ পুরোটাই সরকারের। চার বছর আগে সিসোদিয়া দিল্লি মডেলের ব্যাখ্যা করে হার্ভার্ড বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘নীতিনির্ধারণে বিরাট পাণ্ডিত্যের প্রয়োজন নেই। দরকার সাধারণ মানুষ হয়ে সাধারণের মতো চিন্তা ও তার রূপায়ণ। আমরা সেটাই করছি।’ গোটা দিল্লিতে এই মুহূর্তে মহল্লা ক্লিনিকের সংখ্যা কমবেশি ২০০।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ছাড়া সাধারণ মানুষ ভোগে সরকারি পরিষেবা পেতে। আপ সরকার সেদিকেও নজর দিয়েছে দারুণভাবে। জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে, জাত, ধর্ম বা নানা ধরনের সনদ পেতে কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিদ্যুৎ-জলের বিল, সম্পত্তি কর–সংক্রান্ত সমস্যার সুরাহার জন্য আজ আর সরকারি অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রথম দফার শাসনে আপ সরকার এমন ৪০টি পরিষেবা ঘরে বসে পাইয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয় দফায় জুড়েছে আরও ৭০টি পরিষেবা। ঘরে বসে সরকারি পরিষেবা পেতে দরকার একটি ফোন কল। দিল্লির নাগরিকদের সময় ও অর্থের অপচয় কমেছে। বেড়েছে কর্মসংস্থানের বহর। সবচেয়ে বড় কথা, খতম হয়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। সরকার আক্ষরিক অর্থেই দুয়ারে।

কেজরিওয়ালের রাজনৈতিক লক্ষ্য

আট বছরে কেজরিওয়াল অনেকটাই বদলেছেন। আবেগ ও অত্যুৎসাহ কাটিয়ে বাস্তববাদী হয়েছেন। ২০১৪ সালের ভোটে সারা দেশে প্রার্থী দেওয়াটা ছিল হঠকারিতা। নিজেকে বড় করে দেখানোর প্রবণতায় ভেসে গিয়েছিলেন। সেবার শুধু পাঞ্জাব থেকে লোকসভায় পেয়েছিলেন ৪টি আসন। তিন বছর পর সেই রাজ্যে বিধানসভা ভোটে ২২ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতেছিলেন ২০ আসন। সেই সময়কার বহু ভুল আজ তিনি শুধু শুধরেই নেননি, দলীয় ক্ষমতার ঠিকঠাক মূল্যায়নও করতে শিখেছেন। ধীরে এগোতে চাইছেন এখন তিনি। নজর নিবদ্ধ বছর শেষে গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশের ভোটে। পরের ধাপে ‘হোম স্টেট’ হরিয়ানা। শতাব্দীপ্রাচীন কংগ্রেসের শক্তি ক্ষয় যেখানে যত বেশি, কেজরিওয়ালের দৃষ্টিও সেখানে। পাঞ্জাব জয়ের পর দুটি ঘোষণা করেছেন। বিজয় উৎসব পালন করবেন উত্তর প্রদেশের সর্বত্র। ভোটে লড়া সত্ত্বেও ছিটেফোঁটা সাফল্যের ধারকাছ দিয়েও যেখানে হাঁটেননি, সেখানে ঘটা করে বিজয় উৎসব পালনের উদ্দেশ্য ‘আগামী দিনে আমরা আসছি’ নির্ঘোষ শোনানো। এই ঘোষণারই অঙ্গ কর্ণাটক ও তেলেঙ্গানায় শাখা বিস্তারের সিদ্ধান্ত।

অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভাই-বোনের’ রাজনৈতিক সম্পর্ক তখন ‘অতি-নকুলে’ পরিণত হয় কি না, সেটা হবে এক অন্য আগ্রহ।

কেজরিওয়াল এখন হিসেবি। যে রাজ্যে শক্তিশালী আঞ্চলিক দল রয়েছে, যেমন পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা, অন্ধ্র প্রদেশ বা তামিলনাড়ু, এখনই সেখানে নজর দিতে তিনি নারাজ। দ্বিমুখী লড়াইয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেস বা অন্যরা যেখানে দুর্বলতর, সেই জমিতে আঁচড় কাটতে উন্মুখ। পাঞ্জাব জয় তাঁকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। আগামী দিনে কংগ্রেসও হয়তো বলবে, তিনি বিজেপির বি-টিম!

গোকুলে বেড়ে ওঠা কেজরিওয়ালের রাজনৈতিক উত্থান সাময়িকভাবে নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপিকে অবশ্যই উৎসাহিত করবে দুটি কারণে। প্রথমত, তা কংগ্রেস-মুক্ত ভারত গড়ার সহায়ক, দ্বিতীয়ত, লড়াইয়ে আরও এক সৈনিকের যোগদানের অর্থ বিজেপিবিরোধী ভোট আরও ভাগাভাগি হওয়া। গোয়ায় এবার যা হলো। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে কেজরিওয়াল বিজেপির মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারেন। মোদির মতো তিনিও সাধারণ। পরিবারতন্ত্রের প্রোডাক্ট নন। আট বছরের শাসন সত্ত্বেও দুর্নীতির কালি মাখেননি। হাবে-ভাবে-পোশাকে-চালচলনে সাধারণ থেকে এভাবে দলের বিজয়রথ অব্যাহত রাখতে পারলে কে বলতে পারে তিনিই হয়ে উঠবেন না আগামী দিনে বিরোধী জোটের সম্ভাব্য মুখ? ২০২৪ না হয় অদূর ভবিষ্যৎ। কিন্তু ২০২৯? পাঞ্জাবের পাশাপাশি আরও দুয়েকটি রাজ্য দখলে নিতে পারলে হয়তো সেটাই অনিবার্য হয়ে উঠবে।

অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভাই-বোনের’ রাজনৈতিক সম্পর্ক তখন ‘অতি-নকুলে’ পরিণত হয় কি না, সেটা হবে এক অন্য আগ্রহ।

বিজ্ঞাপন

আলোচিত সংবাদ

বিজ্ঞাপন