সংবাদ আপডেট

‘তাহলে আগামীকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটায় চলে আসুন।’

কোথায়?

‘আমার জিমে। আমাদের পুরোনো বাড়িটা তো চেনেন? ৭৫১ সাতমসজিদ রোড।’

কথোপকথন হচ্ছিল সোহেল তাজের সঙ্গে। পুরোনো বাড়ি মানে তাঁর বাবা বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের বাড়ি। ঢাকার ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডে সে বাড়ি অনেক আগে থেকেই চেনা। কথামতো গত ২৩ অক্টোবর পৌঁছে যাই সেই ঠিকানায়। ঝাঁ চকচকে বহুতল ভবন। আগে ছিল তিনতলা বাড়ি। সোহেল তাজদের শৈশব–কৈশোর কেটেছে সেই বাড়িতেই। নতুন এই ভবনের সাততলায় ব্যায়ামাগার ইনস্পায়ার ফিটনেস বাই সোহেল তাজ। চালু হয়েছে ১৫ অক্টোবর।

লিফট থেকে নামতেই অভ্যর্থনাকক্ষ। করোনাকাল, তাই স্বাস্থ্যবিধি মানা, জীবাণুমুক্ত হওয়ার বিষয়গুলো রয়েছে। জীবাণুমুক্ত করার পর জুতা ঢাকার শু ক্যাপ দেওয়া হলো। তারপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা।

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
দেখালেন নানা রকম ব্যায়াম।
দেখালেন নানা রকম ব্যায়াম।
ছবি: কবির হোসেন

অভ্যর্থনাকক্ষের সোফায় বসেই জিমের ভেতরটা দেখা গেল। এক সদস্যকে ডায়েট বুঝিয়ে দিচ্ছেন সোহেল তাজ নিজেই। কিছুক্ষণ পর সোহেল তাজ আমাদের স্বাগত জানালেন। শরীরচর্চার পোশাক পরে আছেন। পেশিবহুল শরীর দেখে বেশ ভালোই টের পাওয়া যাচ্ছে ৫০ বছর বয়সী এই মানুষ কতটা ফিট। সোহেল বললেন, ‘যাঁরা এখানকার সদস্য হতে আসেন, তাঁদের যেভাবে জিম ঘুরিয়ে দেখাই, আপনাদেরও সেভাবে দেখাচ্ছি। প্রথমে একটা ট্যুর হয়ে যাক।’

আমরা ঢুকলাম জিমে। না কোনো দরজা ঠেলে নয়—এই জিমে কোনো দরজাই নেই। সোহেল তাজের ব্যাখ্যা, ‘ইতিবাচক চিন্তা, মোটিভেশনের জন্য মানুষ জিমে আসে। জিমে এসে যেন সেই অনুভূতি হয়, এটা রাখার চেষ্টা করেছি। একেক মানুষ একেক লক্ষ্য নিয়ে আসে। তবে একটি জায়গায় সবার লক্ষ্য এক—সুস্থ জীবনযাপন।’

শুরু হলো আমাদের জিম ট্যুর। সবার জন্য সব ধরনের ব্যায়াম করার অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে, আছে প্রশিক্ষক। সোহেল তাজ পুরোই ‘ফিট’, তা শুধু নয়—সুস্থ থেকে সুন্দরভাবে যে জীবন যাপন করা যায়, তা তিনি তাঁর পুরো সত্তায় ধারণ করেন। প্রতিদিন সকালেই চলে আসেন ডিওএইচএসের বাসা থেকে। সদস্য কিংবা প্রশিক্ষক সবাইকেই দেখিয়ে দেন ব্যায়ামের খুঁটিনাটি।

সপ্তাহে কমপক্ষে চার–পাঁচদিন ব্যায়াম করেন সোহেল তাজ।
সপ্তাহে কমপক্ষে চার–পাঁচদিন ব্যায়াম করেন সোহেল তাজ।
ছবি: কবির হোসেন

ব্যায়াম, শরীর গঠন, ফিটনেস—এসব ব্যাপারে আগ্রহ কবে থেকে? ছোটবেলা থেকেই জানালেন সোহেল তাজ। বললেন, ‘আপনারা জানেন ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর আমার বাবাসহ জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। মা (জোহরা তাজউদ্দীন) রাজনীতিতে যোগ দেন। ফলে বাসায় খাবারদাবারের কোনো ঠিকঠিকানা ছিল না। মোটা ছিলাম। আমার বয়স তখন ১৩–১৪ বছর। অনেকেই খেপাত। একটা বাচ্চার মনে এটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। স্কুলের ফুটবল দলে নাম লেখাতে চাইলাম। কিন্তু সুযোগ পেলাম না।’ এই ঘটনা দাগ কাটে সোহেল তাজের মনে। একরকম জিদ চেপে যায়। তখন অলিম্পিক চলছিল। ফলে কিশোর সোহেল উৎসাহ পেল শরীরচর্চায়। প্রতিদিন তিনতলা বাসার সিঁড়ি দিয়ে অনেকবার দৌড়ে ওঠানামা চলতে থাকল। ‘মাকে বললাম, দুটো রিং কিনে দিতে। ফ্যান লাগানোর হুকে রিং টানিয়ে ব্যায়াম করতে থাকলাম। নিচতলায় যে ভাড়াটিয়া থাকতেন, তিনি ডাম্বেল এনে দিলেন ভার তোলার জন্য।’ এ ছাড়া সোহেলের সামনে তখন সিলভেস্টার স্ট্যালোন, আর্নল্ড শোয়ার্জেনেগার, ব্রুস লি বড় অনুপ্রেরণা।

১৭ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে যান সোহেল তাজ। তত দিনে শরীরচর্চা নিত্যদিনের অভ্যাস সোহেল তাজের। একদিন সেখানে এক জিমে গিয়ে মুগ্ধ হয়ে যান। ‘ফি শুনে মন খারাপ হয়ে যায়। ছাত্র তখন, অত টাকা নেই। পার্টটাইম কাজ করতাম, ডলার জমিয়ে নিজেই ডাম্বেল, বার্বেল কিনে ব্যায়াম শুরু করলাম।’ তখন রাতের পালায় কাজ করতেন। রাতে কাজের চাপ কম থাকে, তখন ব্যায়াম সেরে নিতেন সোহেল তাজ।

সোহেল তাজ নিয়মিত ব্যায়াম করেন। সপ্তাহে কমপক্ষে চার–পাঁচ দিন তো বটেই। আর হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত খাবার। তিন বেলার বেশি খান না। হাতের পাঞ্জা মেলে দেখিয়ে দিলেন ডায়েট চার্ট। হাতের তালুর অংশ প্রোটিন, চার আঙুলের জায়গাটা সবজি আর বৃদ্ধাঙ্গুলের ফাঁকা জায়গাটা কার্বোহাইড্রেট। এ ছাড়া ‘চায়ে কখনো চিনি খাই না। লিখে দেবেন চিনি হলো বিষ।’ আরও বললেন, ‘দয়া করে জুস খাবেন না। সরাসরি ফল খাবেন।’

শরীর গঠনে ব্যাস্ত সোহেল তাজ।
শরীর গঠনে ব্যাস্ত সোহেল তাজ।
ছবি: কবির হোসেন

তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ ১৯৯৭ সালে দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। গাজীপুর–৪ (কাপাসিয়া) থেকে পরপর দুবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এখন তিনি রাজনীতি থেকে দূরে, তাঁর ভাষায় ‘অবসের আছি’। হটলাইন কমান্ডো নামের টেলিভিশন অনুষ্ঠান করেন। সেটিও পেয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। তবে করোনার কারণে এখন প্রচারিত হচ্ছে না। এই মুহূর্তে তাঁর ধ্যানজ্ঞান ইনস্পায়ার ফিটনেস।

সারা দেশে ব্যায়াম চর্চা ছড়িয়ে দিতে চান সোহেল তাজ।

আলোচিত সংবাদ

বিজ্ঞাপন